সোমবার ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ - ১৩:০০
পবিত্র রজব মাস: রহমত, মাগফিরাত ও আত্মশুদ্ধির স্বর্ণালী উপলক্ষ

ইসলামি বর্ষপঞ্জির অন্যতম সম্মানিত ও ফজিলতপূর্ণ মাস হলো পবিত্র রজব। এটি শুধু একটি মাস নয়; বরং এটি আত্মিক জাগরণ, তাওবা, ইবাদত ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এক মহামূল্যবান সুযোগ।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: পবিত্র কোরআন ও আহলে বাইত (আ.)-এর বর্ণনায় রজব মাসের মর্যাদা এক অনন্য উচ্চতায় সমাসীন।

রজব: আল্লাহর মাস
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

 رَجَبٌ شَهْرُ اللَّهِ، وَشَعْبَانُ شَهْرِي، وَرَمَضَانُ شَهْرُ أُمَّتِي

“রজব আল্লাহর মাস, শা‘বান আমার মাস এবং রমজান আমার উম্মতের মাস।” (বিহারুল আনওয়ার)
এই হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রজব মাস বিশেষভাবে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করার মাস।

কোরআনে রজব মাসের মর্যাদা
পবিত্র কোরআনে চারটি মাসকে হারাম মাস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে:

 إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ… مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ

“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারোটি… তার মধ্যে চারটি সম্মানিত (হারাম) মাস।” (সূরা তাওবা: ৩৬)

তাফসিরে আহলে বাইত (আ.) অনুযায়ী এই চার মাস হলো: রজব, জিলক্বদ, জিলহজ্জ ও মহররম। রজব এদের মধ্যে একমাত্র পৃথক মাস, যা তার মর্যাদাকে আরও স্পষ্ট করে।

ইমাম আলী (আ.)-এর দৃষ্টিতে রজব
আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) বলেছেন, “রজব হলো তাওবার নদী; যে এতে প্রবেশ করবে সে পবিত্র হবে।”(গুরারুল হিকাম)

ইমাম আলী (আ.)-এর বাণী থেকে বোঝা যায়, রজব মাস আত্মশুদ্ধি ও আত্মসংস্কারের শ্রেষ্ঠ সময়।

ইমাম জাফর সাদিক (আ.) ও রজবের ফজিলত
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন, “রজব মাসে একদিন রোজা রাখলে জান্নাত ওয়াজিব হয়।” (সাওয়াবুল আ‘মাল)

আরও বলেন, “রজব মাসে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক ফেরেশতা আহ্বান করে— হে তাওবাকারী, ফিরে এসো! হে প্রার্থনাকারী, আমি তোমার আহ্বানে সাড়া দিচ্ছি।”

ইমাম রেযা (আ.)-এর বর্ণনায় রজব
ইমাম আলী রেযা (আ.) বলেন, “রজব মাসে যে ব্যক্তি ইবাদতে মনোযোগী হয়, আল্লাহ তার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন।”

এই মাসে ইবাদত, দোয়া ও ইস্তিগফারের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।

রজব মাসে আমলের গুরুত্ব
আহলে বাইত (আ.)-এর শিক্ষা অনুযায়ী রজব মাসে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে— তাওবা ও ইস্তিগফার, নফল রোজ, সালাত ও দোয়া দরুদ পাঠ, গুনাহ ত্যাগ ও আত্মসংযম ইত্যাদি। 
বিশেষ দোয়া ও ইস্তিগফার:

 أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَسْأَلُهُ التَّوْبَةَ


ঐতিহাসিক ও আত্মিক তাৎপর্য
রজব মাসেই সংঘটিত হয়েছে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা— ইমাম আলী (আ.)-এর জন্ম (১৩ রজব), মে’রাজও এই মাসেই।

তাছাড়া ইমাম জাওয়াদ (আ.) ও ইমাম হাদী (আ.)-এর শাহাদাত— এই ঘটনাগুলো রজবকে শুধু ফজিলতপূর্ণ নয়, বরং ঐতিহাসিকভাবেও মহান করেছে।

পবিত্র রজব মাস আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এক অপূর্ব আমন্ত্রণ— ফিরে আসার, শুদ্ধ হওয়ার ও আত্মাকে আলোকিত করার। আহলে বাইত (আ.)-এর শিক্ষা অনুযায়ী, এই মাস হলো রমজানের প্রস্তুতি ও আত্মিক যাত্রার সূচনাবিন্দু।

আসুন, আমরা এই পবিত্র মাসকে গাফলত ও অবহেলায় নয়; বরং ইবাদত, তাওবা ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে অতিবাহিত করি। “হে আল্লাহ! আমাদেরকে রজব ও শা‘বান পর্যন্ত পৌঁছে দাও এবং রমজান পর্যন্ত জীবিত রাখো।”

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha